বাউফলে চলছে নববর্ষের প্রস্তুতি

বাউফলে চলছে নববর্ষের প্রস্তুতি

সাইফুল ইসলাম, বাউফল (পটুয়াখালী) :
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার সাড়ে ৪ লক্ষ লোকের আনন্দময় করার জন্য শুভ নববর্ষ পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে ১৫ টি ইউনিয়নে গ্রামে গ্রামে বৈশাখী মেলা (থৌল) প্রস্তুতি চলছে। দোকানে দোকানে বকেয়া টাকা আদায় জন্য শূভ হালখাতার কার্ড বিতরন করা হচ্ছে। মেলায় মেলায় হরেক রকমের বেচাকেনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ঘোড়া দৌড় আয়োজন করা হয়েছে। শত শত যুগ ধরে চলে আসা সংস্কৃতি চর্চায় মরিয়া হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী।
নববর্ষকে কেন্দ্র করে বেশাখ মাসের প্রথম সপ্তাহে উপজেলার ১৫ টি গ্রামে ছোট বড় ২৫ টি মেলা অনুষ্ঠিত হবে। গ্রামগুলো হচ্ছে কালাইয়া, কালিশুরী, বিলবিলাস, নাজিরপুর, নওমালা কাছিপাড়া, চরওয়াডেল, বাশবাড়িয়া, গোসিংগা ও বিলবিলাস। এ মেলা বৈশাখ মাসের প্রথম সপ্তাহ বিভিন্ন এলাকায় পর্যাক্রমে চলবে। মেলাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মিষ্টি দোকানে সারা রাত মিষ্টি তৈরির ধুম চলছে। মাটি ও কাঠের বিভিন্ন ধরনের শিশুর খেলনা তৈরি করা হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে বাশের বিভিন্ন রকম নিত্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। এদিকে মেলা বিক্রি করার জন্য প্লাস্টিক জাতীয় বিভিন্ন পণ্য মোবাইল, ফুলদানি, পশু পাখি ও গৃহ সামগ্রী বেশি দেখা যাচ্ছে।
জানা যায়, উল্লেখিত মেলার কোন ব্যবস্থাপনা কমিটি নেই। প্রতিবছর দিন তারিখ মত নিধার্রিত স্থানে মেলা বসে। বেশির ভাগ মেলার শুরু ও উদ্যোক্তাদের পরিচয় জানা নেই।   
ঐতিহ্যবাহী সাবুপুরা মেলা বাউফল উপজেলার বগা ইউনিয়নের সাবুপুরা গ্রামের মধ্যে সাবুপুরা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ঘিরে ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলা। প্রতিবছর পহেলা বৈশাখ আসলেই দিনব্যাপি মেলাটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জানাযায়, ব্রিটিশ আমলে রাজা চন্দ্ররায় চৌধুরী থাকতেন সাবুপুরা গ্রামে। এ গ্রামে একটি মন্দির ছিল। মন্দিরের পূজা পার্বন করতেন। তিনি স্থানীয় জনসাধারনের উৎসাহে এ মেলার আয়োজন করেন। কলকাতার সাহারা এখানে বাস করত। সেই সাহারাদের নামানুসারে সাহাপারা হতে সাবুপুরা নামটির উৎপান্ন হয়েছে। একসময় সাবুপুরা মেলার ব্যাপ্তি ছিল সপ্তাহব্যাপী। নববর্ষে আগের দিন চৈত্র সংক্রান্তি থেকে নববর্ষের প্রথম সপ্তাহে গ্রামটি থাকত লোকারন্য।এ গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে পহেলা বৈশাখ আসলেই মেলাটির আনন্দ ভোগ করার জন্য আতœীয় স্বজনের ভিড়  জমে। গ্রামের হিন্দু পাড়াগুলোতে দিনরাত ঢোলবাশির শব্দ শোনা যেত। মেলার আগের দিন থেকে যাত্রাগান, থিয়েটার, পুতুল নাচ, জারিগান চলতো সপ্তাহব্যাপি। এ মেলায় ৪০ থেকে ৪৫ টি ঘোড়া প্রতিযোগিতার অংশগ্রহন করে। প্রতিযোগিতায় বিজয়ীকে দেয়া  হয় বিশেষ পুরুস্কার।
শূভ হালা খাতা, কোটি কোটি টাকা বকেয়া আদায়ে আগামী ১৪২৬ বাংলা সালকে স্বাগত জানিয়ে পূরানো বছর কে বিদায় দিয়ে প্রতি দোকানে নতুন খাতা তৈরি করা হয়েছে। বকেয়া টাকা আদায় করার জন্য গত এক সপ্তাহ আগে প্রত্যেক ক্রেতার কাছে চিঠি বিতরন করা হয়।
উপজেলার একাধিক ব্যবসায়ীর সাথে আলাপ করে জানা যায়, পহেলা বৈশাখ থেকে ৩ বৈশাখ পর্যন্ত দিন ব্যাপী উপজেলা সদর এলাকায় শূভ হালখাতা চলবে। উপজেলার প্রত্যেক দোকানে বকেয়া উত্তোলন করার টার্গেট রয়েছে। খোজ নিয়ে জানা গেছে, ১৪২৫ সালের বৈশাখ মাসের প্রথম সপ্তাহে ১৪৭ টি গ্রামে আড়াই হাজার দোকানে শুভ হাল খাতা অনুষ্ঠিত হবে। তবে ক্রেতার মনে একটু হতাশার ভাব আছে কেননা মাঠে কোন ফসল নেই এদিকে ইংরেজী মাসে দ্বিতীয় সপ্তাহ। মার্চ মাসে প্রাপ্ত মাসিক বেতন টাকা খরচ হয়ে গেছে। এখন চাকরীজীবীদের হাতে কোন টাকা নেই। মাঠে কোন উৎপাদিত ফসল নেই তাই গ্রামের মানুষের হাতে টাকা নেই। মুদি দোকান জামাল জানান, তার বকেয়া টাকার উত্তোলন টাগের্ট হচ্ছে ১ লক্ষ টাকা। কিন্তু ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন হবে না। মোটা অংকের বকেয়া ক্রেতারা হালখাতায় অংশগ্রহন করছে না।